অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ ইহুদিবাদী ইসরাইলের ভয়াবহ বিমান হামলায় লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাতের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইহুদিবাদী ইসরাইলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা শাহাদাতবরণ করেন। পার্সটুডের রিপোর্ট অনুযায়ী, সাইয়্যেদ নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় বয়ে যায়।
ইরাকের শীর্ষ শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ সিস্তানির দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে: এই মহান শহীদ ছিলেন বিগত কয়েক দশকের মধ্যে এমন একজন প্রতিভাবান নেতা যিনি ইহুদিবাদী ইসরাইলি বাহিনীর কবল থেকে লেবাননের ভূখণ্ড মুক্ত করার সংগ্রামে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। এমনকি তিনি উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী দায়েশের কবল থেকে ইরাকি জনগণকে মুক্তি দেয়ার কাজেও বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। আর অবশেষে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত জাতিকে সমর্থন জানাতে গিয়ে নিজের মূল্যবান জীবনটি অকাতরে বিলিয়ে দিলেন।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এক বিবৃতিতে ইহুদিবাদী ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন: ফিলিস্তিন ও লেবাননের জনগণ ঘাতক নেতানিয়াহুর গণহত্যা ও সন্ত্রাসী তৎপরতার প্রধান শিকারে পরিণত হচ্ছেন। নেতানিয়াহুর অপরাধযজ্ঞ বিশ্ববাসীকে হিটলারের নৃশংসতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হিজবুল্লাহ নেতাকে হত্যার নির্দেশ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বসে জারি করা হয়। কিন্তু বিশ্ব নেতারা নীরব। কেউ এই বেআইনি ও অন্যায় কাজের প্রতিবাদ পর্যন্ত করেননি। তবে লেবানন ও ফিলিস্তিনের যে জনতা নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সরব হয়েছেন তাদেরকে কেউ নীরব করতে পারবে না।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে সুস্পষ্টভাবে লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতার শাহাদাতের ঘটনায় ইহুদিবাদী ইসরাইলের নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরাইলকে তার পাশবিকতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভর জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে শহীদ নাসরুল্লাহকে হত্যার প্রতি ইঙ্গিত করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ডের রেওয়াজ চালু করার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সা’দ হারিরি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন: এই কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ড লেবাননসহ গোটা অঞ্চলকে সংঘাত ও সহিংসতার নতুন পর্যায়ে উপনীত করেছে।
হামাসের পলিটব্যুরো উপপ্রধান খলিল আল-হাইয়্যা বলেন: শহীদ নাসরুল্লাহ ও তার সহকর্মীদের হত্যাকাণ্ড নিঃসন্দেহে একটি সন্ত্রাসী তৎপরতা এবং লেবাননের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে প্রতিরোধ ফ্রন্ট পরাজিত হবে না বরং এই ফ্রন্ট প্রতিশোধ গ্রহণের নতুন শপথ নিয়ে নতুন উদ্যোমে লড়াই শুরু করবে।
ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলনের নেতা সাইয়্যেদ আব্দুল-মালিক বদরুদ্দিন আল-হুথি এক বিবৃতিতে বলেন: সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর শাহাদাত প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মধ্যে আরো বেশি আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে ইহুদিবাদী ইসরাইল ধ্বংস হয়ে যাবে। শহীদ নাসরুল্লাহ ইসরাইল ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে একের পর এক পরাজয় উপহার দিয়েছিলেন।
পাকিস্তানের সিনেট সদস্য আল্লামা নাসের আব্বাস জাফরি বলেন: এটি একটি অপরাধ, আন্তজাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং যেকোনো স্থানে যেকোনো মানুষকে হত্যা করার বিষয়টিকে বৈধতা দেয়ার নামান্তর। ইহুদিবাদী শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামের মহান ঝাণ্ডাবাহী ছিলেন শহীদ নাসরুল্লাহ। তার প্রদর্শিত পথ শক্তিমত্তার সঙ্গে অনুসরণ করে যাবেন তাঁর সহযোদ্ধারা।
ফিলিস্তিনের ইসলামি জিহাদ আন্দোলন এক বিবৃতিতে বলেছে: যখন আরব শাসকরা কথিত সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের নামে ইসরাইলের সঙ্গে আপোষরফার পথ বেছে নিয়েছেন তখন লেবাননের হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গোটা অঞ্চল জুড়ে প্রতিরোধ যোদ্ধারা অচিরেই ইহুদিবাদী ইসরাইলকে চড়া মূল্য দিতে বাধ্য করবে।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ শিয়া আল-সুদানি এক বিবৃতিতে বলেন: ইহুদিবাদী ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের মাত্রা প্রমাণ করছে, দখলদার ইসরাইল গোটা অঞ্চল জুড়ে সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতা ছড়িয়ে দিতে চায়। তিনি ইরাকের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন ও লেবাননি জনগণের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত সমর্থন করে বলেন: আন্তর্জাতিক ও মানবিক আইন মেনেই ইরাক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
Leave a Reply